ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

পালিত হচ্ছে শহীদ শামসুজ্জোহা দিবস  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শহীদ ড. শামসুজ্জোহা দিবস ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৯ সালের এ দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি হানাদারের গুলিতে নিহত হন। তিনিই দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার বিচার, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিসহ আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনে ফুঁসে ওঠা রাবি ছাত্রদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

ছাত্রছাত্রীদের প্রতি একজন শিক্ষকের কতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকা উচিত, ড. জোহা জীবন দিয়ে সেটি নির্ধারণ করে গেছেন। পাকিস্তানি সেনাদের গুলি থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে তিনি বলেছিলেন, “আমার কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে।” তিনি নিজের জীবন দিয়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঊষালগ্নে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আত্মদানকারী প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা, যাঁর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের দাবানল সারা দেশে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

১৯৬১ সালে ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং পরের বছরেই তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে লন্ডনের বিখ্যাত ইমপেরিয়াল কলেজে যান। তিনি ১৯৬৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৬ সালে রিডার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করলে ছাত্র-শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই অনুধাবন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার বীজ বপন করলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে। এ সময় ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৬৬-১৯৬৮, তত দিনে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করলে ৬ ও ১১ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলায় গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এমন একটি আবহে ড. জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত হলে তাঁদের হত্যার প্রতিবাদ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। একই দাবিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে এবং ধর্মঘট পালিত হয়। ওই দিন ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে ড. জোহা ছাত্রদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনেন এবং আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই দিন রাতে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভায় ড. জোহা বলেছিলেন, ‘শুধু ছাত্ররা নয়, আমরা সবাই মিলে এই দানবীয় শক্তিকে রুখে দাঁড়াব, মরতে যদি হয় আমরা সবাই মরব।’ ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনী ও ছাত্ররা মুখোমুখি অবস্থানে। ড. জোহা একদিকে ছাত্রদের শান্ত করছিলেন, অন্যদিকে সেনা কর্মকর্তাদের বোঝাচ্ছিলেন আর বারবার বলছিলেন, “প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার। আমার ছাত্ররা এখনই ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে।” একপর্যায়ে ছাত্রদের বোঝাতে সক্ষম হন, ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেন। পরিস্থিতি যখন শান্ত, ঠিক তখনই গুলির শব্দ। ড. জোহাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় এবং বেয়নেট চার্জ করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। দীর্ঘ সময় পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, ততক্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, যার ফলে ড. দত্ত অনেক চেষ্টা করেও ড. জোহাকে বাঁচাতে পারেননি।

এ দিনটিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। 
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি